Wikipedia

Search results

Showing posts with label রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা. Show all posts
Showing posts with label রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা. Show all posts

Tuesday, 12 May 2020

লকডাউনে মদ্যপান! তারপর? একটু ভাবুন ….

দিল্লীতে লকডাউন চলাকালীন সুরা প্রেমীদের তান্ডাব                photo courtesy: twitter


    লকডাউন ঘোষণার প্রায় দেড় মাস পর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে- কনটেইনমেন্ট জোন ছাড়া সর্বত্র খোলা যাবে সুরা বিপননী। এই খবর ‘সুরা-প্রেমী’-দের কাছে হাতে আকাশের চাঁদ পাওয়ার সামিল। দীর্ঘ দেড় মাস ‘আনুষ্ঠানিক খরা’ যাবার পর ‘সুরা-চাতক’-রা  আজ আনন্দে পাগল পারা ! সরকারও আর্থিক দৈন্যতা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুরা প্রেমীদের কৃপা প্রার্থী। কারণ আর যাই হোক এ হতভাগ্য দেশে মদ ধারে বিক্রয় হয়না এবং সুশীল সুরা প্রেমীরা নিষ্ঠা সহকারে সরকারি কোষাগার পূর্ণ করেন। এতদিন সুরাসাক্ত জনগণ বিরহী যক্ষের ন্যায় সুরা বিচ্ছেদে ছিলেন কাতর  এবং নিত্য প্রলাপে (পড়ুন withdrawal syndrome) ‘করনাসুর’-র বাপান্ত করতেন। এই মহান ঘোষণা সুরাপ্রেমীদের জন্য স্বাধীনতা ঘোষণার ন্যায় চিত্তাকর্ষক। সত্যিই সুরাপান তাদের স্বাধীনতা দেয়। স্বাধীনতা দেয় পারিবারিক, সামাজিক দায়িত্ব পালন থেকে।  সুরার মাদকতায়  ব্রহ্মজ্ঞানীর ন্যায় তারা সাময়িক নিষ্কৃতিপান জাগতিক মোহ-মায়া থেকে। কিন্তু সুরার মাদকতা  ফিকে হলে  তারা পুনরায় মোহাবিষ্ট (পড়ুন সাংসারিক অভাব-অনটন) হন। ঠিক যেমন গঙ্গা স্নানের সময় পাপ পাশের গাছে অপেক্ষা করে,  নেশা কাটার পর জাগতিক চাহিদাগুলিও মূর্তিমান যমরাজের ন্যায় তাদের সামনে উপস্থিত হয়। এ সব সমস্যার সমাধান কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়, তবে সময়-সপেক্ষ। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যারা নিজেদের সমস্যার সম্মুখীন হননি, আজ লকডাউনের সময় তারা কি করবেন? পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য তাদের কাছে আছে অজস্র অজুহাত। লকডাউনকালীন সামাজিক স্থবিরতা ও পারিবারিক অনটন এনাদের মানসিক অবস্থাকে আরও জটিল করেছে। সরকারী ঘোষণায় এখন নিজের এলাকায় মদের দোকান খোলা; তাই সব সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান , মদ্যপান ! 




           লকডাউনে কোলকাতায় সুরাপ্রেমীদের জমায়েত,  photo courtesy: Arvind Yadav, Hindustan Times


কিন্তু সুরা প্রেমীদের উন্মত্ততায় আজ জনস্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিরাট প্রশ্নের মুখে। কয়েক দিন যাবৎ গণমাধ্যম ও সমাজ মাধ্যমে সুরা পিপাষুদের কার্যকলাপ (পড়ুন তান্ডব) যতই কৌতুকের উদ্রেক করুক না কেন, তার ভয়াবহতায় আমরা শঙ্কিত। এই লাগামহীন জনতা লকডাউনের সমস্ত সুফলকে মূহুর্তে ধূলায় মিশিয়েছে। বিভিন্ন সুরা বিপননীর সামনে  সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম  যেমন অমান্য হয়েছে, তেমনি মদ্যপ জনতা দ্বারা  পরিবারের সদস্য তথা এলাকাবাসীও আক্রান্ত হয়েছে। ভারত সরকারের পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক যেখানে লকডাউন চলাকালীন উর্দ্ধমুখী গার্হস্থ্য   হিংসার ঘটনায়  উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, সেখানে সুরা বিপননী গুলি খোলার অর্থ  হ’ল গার্হস্থ্য হিংসাকে প্রশ্রয় দেওয়া। মদ্যপান যে স্বাস্থ্যের  পক্ষে হানিকর সে সম্পর্কে আমরা সকলেই অবহিত।       

অ্যালকোহল বিভিন্নভাবে  স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।  অন্ত্রের মধ্যে থাকা মাইক্রোবায়াম যেমন Bifidobacteria, lactic acid bacteria পাচন-তন্ত্রের পক্ষে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অতি মাত্রায় মদ্যপানে প্রয়োজনীয় এই মাইক্রোবায়ামগুলি নষ্ট হয়  যা  পাচনতন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে অন্ত্রের এপিথেলিয়াল কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এতে পুষ্টি উপাদানের শোষণ ব্যাহত হয়। উপরন্তু ভাল ব্যাকটেরিয়া (Good Bacteria) –র সংখ্যা হ্রাস পায় ও অন্ত্রে অস্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়াগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এগুলি পুষ্টি উপাদানের শোষণের সময় রক্তে প্রবেশ করে।এই দুর্বৃত্ত ব্যাকটেরিয়াগুলি লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং লিভারের ক্ষতি হতে পারে। আধুনিক গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, অ্যালকোহল কেবল লিভার তথা পাচনতন্ত্রের ক্রিয়াকে ব্যাহত করে না, এটি শ্বাসতন্ত্রকেও প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত মদ্যপান ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের প্রতিরোধক কোষগুলির কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে, যা নিউমোনিয়া, যক্ষা এবং Acute Respiratory Distress Syndrome (ARDS) এর ঝুঁকি বাড়ায়। আবার অতিরিক্ত মদ্যপান,  শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার  গুরুত্বপূর্ণ  ম্যাক্রোফেজ, T এবং B কোষের সংখ্যা ও কার্যকারিতাকে হ্রাস করে। তাই মদ্যপানকারীর করোনায় সংক্রমণের আশঙ্কা অধিক।  

                       



                                                                     চিত্র: মানব শরীরে মদ্যপানের কুফল
                        
                                       

ম্যাক্রোফেজগুলি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন। ম্যাক্রোফেজগুলি শরীরে ক্ষতিকারক প্যাথজেন (মূলত ভাইরাস) ও ক্যান্সারাস কোষগুলি প্রবেশের সাথে সাথে তাদের চিহ্নিত করে T Cell দের সতর্ক করে। T Cell গুলি হ’ল ঐ নির্দিষ্ট প্যাথজেনের অ্যান্টিবডি যা ঐ প্যাথজেনদের সরাসরি আক্রমণ করে। কারণ T Cell গুলি ইতিমধ্যে জানে যে কীভাবে নির্দিষ্ট ধরণের ভাইরাসকে হত্যা করা যায়। একবার T Cell গুলি কার্যকর হলে পরবর্তিতে ঐ নির্দিষ্ট  ভাইরাসের সংক্রমণ সাধারণত হয় না। প্রকৃতপক্ষে T Cell গুলি নির্দিষ্ট  ভাইরাসের ভ্যাকসিন হিসাবে ভবিষ্যতে সুরক্ষা দেয়। এজন্য কোন ব্যক্তির একবার চিকেন পক্স হলে সাধারণত দ্বিতীয়বার হয় না। এছাড়াও আছে B (শ্বেত রক্ত কনিকা) Cell যা B লিম্ফোসাইট নামেও পরিচিত। এটি সাইটোকাইনিন নি:সরণের মাধ্যমে ব্যকটেরিয়াদের আক্রমণ করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, T ও B Cell কার্যকারিতা কমে গেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও  হ্রাস পায়।  


নতুন এক পরীক্ষায় জানা গেছে, মদ্যপানের ফলে শরীরে ক্ষতির পরিমাণ আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে অ্যালকোহলিক হবার ঝুঁকি, দীর্ঘমেয়াদি হৃদরোগ, এবং সর্বোপরি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার সাথে সাথে এটা  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ধ্বংস করে। শিকাগোর লয়োলা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Loyola University) এক সমীক্ষায় দেখা যায় অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমীক্ষাটি  Alcohol  নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সমীক্ষাটি ২৭ বছরের আশেপাশে ১৫ জন অংশগ্রহণকারীর উপর পরিচালিত হয়। অংশগ্রহণকারীদের ওজনভেদে চার থেকে পাঁচ পেগ ভদকা পান করতে বলা হয়েছিল। অল্প সময়ে এই মাত্রার মদ্য পানকে অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ২০ মিনিট পর যখন রক্তে মাদকের প্রভাব চূড়ান্ত, তখন মদ্যপায়ীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এছাড়াও যথাক্রমে দুই এবং পাঁচ ঘণ্টা পর পুনরায় রক্তের নমুনা নেওয়া হয়। সমীক্ষকরা লক্ষ্য করেন ২০ মিনিট পরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মাদকের বিষক্রিয়ার বিপরীতে বেশ শক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয় যাতে  মদ্যপায়ীরা অসুস্থ্য হয়ে না পড়ে। কিন্তু দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা পরে দেখাযায়, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা লক্ষ্যণীয় ভাবে  দূর্বল হয়েছে। ঘটনাটির আরো বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের জন্য সমীক্ষকরা মদ্যপায়ীদের রক্তের নমুনায় রোগ প্রতিরোধ  ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিভিন্ন প্রোটিন শ্বেত রক্ত কণিকা, বিশেষ করে লিউকোসাইটস, মনোসাইটস এবং ন্যাচারাল কিলার (NK Cell) সেল ইত্যাদির মাত্রা পরিমাপ করেন। দেখাযায় মদ্যপানের ২০ মিনিট পর এই উপাদানগুলি রক্তে স্বাভাবিক মাত্রাতেই ছিল। কিন্তু মদ্যপানের দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা পরে অংশগ্রহণকারীদের রক্তে মনোসাইটস ন্যাচারাল কিলার সেলের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়। এই গোটা প্রক্রিয়াটাকে বলা হয় বাইফেজিক ইমিওনোলজিকাল রেসপন্স বাস্তবে যার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে চূড়ান্ত মাতাল হবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়া। 

                                    
                                         চিত্র:  রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থার উপর অ্যালকোহলের প্রভাব

এছাড়াও মদ্যপ বক্তির অসংলগ্ন  আচরণও সামাজিক ও পারিবারিক পরিমণ্ডলকে দুষিত করে। আমরা সাধারণত কয়েক ঘণ্টার ভেতরে চার-পাঁচ পেগ মদ্যপানকে স্বাভাবিক ধরি, কিন্তু এই পরীক্ষায় ব্যাপারটা অন্যভাবে ধরা পড়েছে। সুতরাং, নিয়মিত  মদ্যপানে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিপদজনকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে মদ্যপায়ীরা সাধারণ অসুখ-বিসুখ থেকে  সেরে উঠতেও অনেক সময় নিয়ে থাকে। আমাদের ইমিউন সিস্টেম (রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা) আমাদের শারীরিক প্রতিরক্ষার প্রথম সীমানা। এটা দুর্বল হয়ে পড়লে অতি সাধারণ অসুখ ও আমাদের কাবু করে ফেলে। দেখা যায় যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা দূর্বল, তাপমাত্রার সামান্য তারতম্যে তাদের ব্যাকটেরিয়াল ও ভাইরাল ইনফেকশান বা সংক্রমণ হয়। তাদের ঘন ঘন সর্দি বা বুকে কফ বসে যাবার মত ব্যাপারগুলি ঘটে ও নিজে থেকে তা সারে না।    



 সুতরাং, একথা নি:সন্দেহে বলাযায় যে মদ্যপানকারীর করোনায় সংক্রমণের আশঙ্কা অধিক। তাই যারা সুরা-বিপননীর সামনে দলে দলে জমায়েত করছেন, তারা যেমন নিজেদের পরিবারের  বিপদ বাড়াচ্ছেন, তেমনী মশা-মাছির ন্যায় সমাজে সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন।  বহু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যেখানে দেশের অধিকাংশ নাগরিক লকডাউনের বিধি মেনে চলছেন, সেখানে মদের দোকান খোলার ন্যায় হঠকারী সিদ্ধান্ত সত্যিই নিন্দনীয়। আশাকরি পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হবার পূর্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে।








লকডাউনে মদ্যপান! তারপর? একটু ভাবুন ….

দিল্লীতে লকডাউন চলাকালীন সুরা প্রেমীদের তান্ডাব                photo courtesy: twitter     লকডাউন ঘোষণার প্রায় দেড় মাস পর সরকার সিদ্ধ...