Wikipedia

Search results

Showing posts with label Real Scenario. Show all posts
Showing posts with label Real Scenario. Show all posts

Wednesday, 25 April 2018

দামোদর অববাহিকার বন্যা কি স্বাভাবিক বন্যা না ‘ ম্যান মেড ’ ?



      দামোদর উপত্যকার সংক্ষিপ্ত পরিচয়:

 পশ্চিম বাংলার যে অঞ্চলগুলি অধিক বন্যাপ্রবণ তার মধ্যে উল্লেযোগ্য হল দামোদর উপত্যকা দামোদর উপত্যকার মোট আয়তন হল ২৪২৩৫ বর্গ কি.মি এর উৎস হল ছোটনাগপুর মালভূমির খামারপাত পাহাড়। উচ্চ দামোদর অববাহিকা  ঝাড়খন্ডে  এবং নিম্ন  অববাহিকাটি পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। এই নদ মূলত ঝাড়খন্ডের হাজারিবাগ, রামগড়, কোডারমা, গিরিডি, বোকারো, ছাতরা ও ধানবাদ জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি ও হাওড়া জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উলুবেড়িয়ার  কাছে গড়চুম্বকে হুগলি নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। দামোদরের প্রধান উপনদীগুলি হল বরাকর, কোনার, জামুরিয়া, বোকারো, ঘারি, খাদিয়া প্রভৃতি। উচ্চ দামোদর অববাহিকাটি মূলত মালভূমি ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ কিন্তু নিম্ন  অববাহিকাটি কৃষি সমৃদ্ধ সমভূমি অঞ্চল।

দামোদর উপত্যকার বন্যা ও ডি. ভি. সি প্রকল্পের  ইতিহাস:

 প্রায় প্রতি বছর দামোদর উপত্যকা  সন্নিহিত স্থানসমূ্হ ছোটখাটো বন্যার সম্মুখিন হয় এবং কয়েক বছর  পরপরই  প্রলয়ঙ্কারি বন্যার ভ্রকুটি দেখা দেয়।  স্বাধীনতার পূর্বে বন্যার প্রকোপ ছিল আরও ভয়ঙ্কর ও নৈমিত্তিক ১৭৩০ সালের বন্যা হল  দামোদর উপত্যকার প্রথম নথিবদ্ধ বন্যা। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৮২৩, ১৮৪৮, ১৮৫৬, ১৮৫৯, ১৮৬৩, ১৮৮২, ১৮৯০,১৮৯৪, ১৯০১, ১৯০৫, ১৯০৭, ১৯১৩, ১৯১৬, ১৯২৩ এবং ১৯৩৫ সালে নিম্ন  দামোদর অববাহিকাতে ভয়ঙ্কর বন্যা দেখা দেয়। জন্য দামোদর নদকে বলা হত বাংলার দু:খ।পরবর্তিতে  ১৯৪৩ সালে প্রবল বন্যা হওয়ার পর, তদানিন্তন ব্রিটিশ সরকার এই অঞ্চলে বন্যার কারন ও তার নিয়ন্ত্রনের উপায় নির্ধারনের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে, যার অন্যতম সদস্য ছিলেন বর্ধমানের মহারাজা এবং খ্যাতনামা পদার্থবিদ ড: মেঘনাথ সাহা উক্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসি উপত্যকা (Teensy Valley Corporation) কর্তৃপক্ষের অন্যতম প্রধান বাস্তুকার W.L Voorduin কে দামোদর উপত্যকা অঞ্চলের বন্যা সমস্যার সমাধানকল্পে একটি রিপোর্ট দিতে অনুরোধ করা হয়।

       ১৯৪৪ সালে W.L Voorduin তাঁর বিস্তারিত রিপোর্টটি পেশ করেন। ২৪২৩৫ বর্গ কিমি
 দামোদর উপত্যকার সামগ্রিক বিকাশের জন্য তিনি যে সুপারিশ গুলি করেছিলেন সেগুলি হল:

১. বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য উচ্চ দামোদর অববাহিকায় মোট ৭ টি বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ,
২. নিম্ন  অববাহিকায় আড়বাঁধ বা ব্যারেজ নির্মানের দ্বারা দামোদরের জলকে সেচ খালের মাধ্যমে চাষের জমিতে নিয়ে যাওয়া,
৩. জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ন।

    ভারতের তৎকালীন সংবিধান সভার আইন অনুসারে ডি.ভি.সি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৪৮ সালের ৭ই জুলাই। যা Damodar  Valley Corporation Act (Act No.XIV of 1948) নামে পরিচিত। এটি ছিল একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি, যার অংশীদার ছিল তৎকালীন বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ভারত সরকার। বহুমুখী নদী পরিকল্পনা হিসাবে উদ্যোগ ছিল উপমহাদেশে প্রথম।  ভরদুইন যে সাতটি প্রধান জলাধারের পরিকল্পনা দিয়েছিলেন সেগুলি হল বরাকর নদীর উপর তিলাইয়া মাইথন; দামোদরের উপর আইয়ার, পাঞ্চেত বারমো; বোকারোর উপর  বোকারো এবং কোনার নদীর উপর কোনার বাঁধ। তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবাবিয়ত হলে চূড়ান্ত বন্যার সময় প্রায় এক কোটি কিউসেক জল নিয়ন্ত্রনের সুযোগ ছিল।  তাছাড়া পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে প্রতিটি জলাধারের সাথে জলবিদ্যুৎ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র  থেকে মিলিত ভাবে লক্ষ থেকে . লক্ষ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সুযোগ ছিল। কিন্তু বাস্তবে মাত্র চারটি প্রধান বাঁধ যথাক্রমে তিলাইয়া, পাঞ্চেত, মাইথন কোনার এবং দূর্গাপুরে নিম্ন  দামোদরের উপর একটি ৬৯২ মিটার দৈর্ঘ্য ১২ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট ব্যারাজ নির্মাণ করা হয়। এই ব্যারাজের ডান তীরের সেচ খালগুলির দৈর্ঘ্য ৮৮ কিমি বাম তীরের খালগুলির দৈর্ঘ্য ১৩৬ কিমি। এই বাঁধগুলি নির্মাণের ফলে খারিফ মরসুমে 8 লক্ষ হেক্টর রবি মরসুমে ২২ হাজার হেক্টর কৃষি জমি উপকৃত হয়েছে।পরবর্তিতে দামোদরের উপর অপেক্ষাকৃত ছোটবাঁধ তেঁনুঘাট, গোন্ডা এবং বরাকরের উপর জামুনিয়া নির্মিত  হয়েছে।

                       চিত্র : দামোদর অববাহিকার বাঁধ ও ব্যারাজ সমূহ।

ডি.ভি.সি –র প্রধান বাঁধগুলির বর্তমান পরিস্থিতি ও  বন্যার কারণ:

          দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বাঁধগুলির গড় বয়স প্রায় ৬০ বছর। উচ্চ অববাহিকা তথা ধারন অববাহিকায় (Catchment Area) অত্যাধিক খনিজ সম্পদের আহরণ, বনভূমি ধ্বংস, দ্রুত নগরায়নের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয়জনিত কারনে  বর্তমানে চারটি প্রধান বাঁধের মোট ধারন ক্ষমতা ২৮.৯৫% কমে গেছে (সারণী ) উচ্চ দামোদর অববাহিকায় অবস্থিত খোলামুখ খনিগুলি (Open pit mine) মৃত্তিকা ক্ষয়ের মাধ্যমে বাঁধগুলির ধারন ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস করছে তাছাড়া দামোদর সহ অন্যান্য নদ-নদীগুলির সামগ্রিক পরিস্থিতিও যথেষ্ট আশঙ্কাজনক। উচ্চ অববাহিকায় বাঁধ নির্মানের কারনে নদ-নদী সমূহের স্বাভাবিক প্রবাহ আজ ক্ষতিগ্রস্ত। শুষ্ক ঋতুতে জলপ্রবাহের অভাবে নিম্ন  প্রবাহগুলি ক্ষীণপ্রায় এবং নদীর স্বাভাবিক নিম্নক্ষয়ের অভাবে নদীখাতগুলি মজে গিয়েছে। বর্তমানে নদীখাতগুলি প্রশস্থ কিন্তু অগভীর। উপরন্তু পার্শ্ববর্তী স্থান থেকে বায়ুবাহিত আবর্জনা নদীবক্ষে সঞ্চিত হবার কারনে নদীগুলির ধারণক্ষমতা আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে বর্ষার অতিরিক্ত জলপ্রবাহ নদীগুলি বহনে অক্ষম। এই অতিরিক্ত জলপ্রবাহ নিয়ে দামোদর অন্যান্য নদীগুলি যখন পূর্ব দিকে ধাবিত হয়, তখন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় মানুষের চলাচলের জন্য নদীর উপর আড়াআড়িভাবে নির্মীত সেতু, কালভার্ট, রেল সড়কপথ। এই রেল রাজপথের নীচে জল নিষ্কাষনের পথগুলি (কালভার্ট)এত ছোট রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে প্রায় বুজে যাওয়ায়, এর মধ্য দিয়ে জল নিষ্কাষিত হওয়া সম্ভব হয় না, ফলে বন্যার জল দীর্ঘ সময় জমে থাকে। বর্তমানে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, বর্ষার জল হুরমুড়িয়ে এলে আর বার হবার জায়গা নেই সমুদ্রে পৌঁছানো তো দূরের কথা মূল নদীর সাথেই মিশতে পারছে না। যাও বা মিশতে পারছে, দামোদরের বহন ক্ষমতা সীমিত হওয়ার দরুন বহুদিন জল দাঁড়িয়ে থাকছেযত বছর গড়াচ্ছে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

বাঁধ
নির্মাণ কাল
প্রাথমিক জলধারন ক্ষমতা
(হাজার কিউবিক মিটার)
বর্তমান জলধারন
(ক্ষমতা হাজার কিউবিক মিটার)
প্রাথমিক গভীরতা      (মিটার)
বর্তমান গভীরতা       (মিটার)
সর্বোচ্চ জল নিষ্কাষনের পরিমান
(কিউবিক মিটার/সেকেন্ড)
তিলাইয়া
১৯৫৩
৩৮০৭১০
৩০৫৯৩০
৩৭২.৪৭
৩৭১.৫৬
১৩৪৮
মাইথন
১৯৫৮
১০৯৩৫৪০
৮০৩৬২০
১৫২.৪০
১৫০.৮৮
১৩৫৯২
পাঞ্চেত
১৯৫৯
১১৯৩৪৬৪
৭৪৮৩৭৫
১৩৫.৬৪
১৩২.৫৯
১৬৬০৮
কোনার
১৯৫৫
২৪৭৯৬০
২১৩৫৬০
৪২৭.৯৪
৪২৭.০৬
৬৭৯৬
     মোট
২৯১৫৬৭৪
২০৭১৪৮৫

সারণি ১ : দামোদর উপত্যকা অঞ্চলের প্রধান বাঁধগুলির বৈশিষ্ট্য 

  প্রসঙ্গত: আরও একটি ব্যাপার উল্লেখযোগ্য যে, বাঁধগুলি মূলত উচ্চ দামোদর অববাহিকায় নির্মিত যেখানে বৃষ্টিপাতের  পরিমাণ নিম্ন অববাহিকার তুলনায় কম। সাধারনত: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতগুলি উচ্চ অববাহিকায় (ছোটনাগপুর মালভূমি) পৌঁছানোর আগে নিম্ন অববাহিকায় প্রবল বর্ষন ঘটায় এবং অনতিবিলম্বে নদীখাতসমূহ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর ঘূর্ণবাত উচ্চ আববাহিকায় স্থায়ী হলে অতিবর্ষণ জনিত কারনে বাঁধগুলি জল ছাড়তে বাধ্য হয় এবং নিম্ন খাতগুলি যা আগেই জলে টইটম্বুর ছিল তা ছাপিয়ে যায় বন্যা সংঘটিত হয়। কিছু স্থানে নদীর প্লাবনভূমিগুলি নদীখাত অপেক্ষা নীচু, ফলে  বন্যার জল একবার প্রবেশ করলে সহজে বার হতে পারেনা। এই সময় যদি আবার ভরা কোটাল থাকে তাহলে নিম্ন অববাহিকার জল হুগলী নদীতে নামতে অধিক সময় নেয় পরিস্থিতি সংকটজনক হয়।যেমন ২০০০ সাল এবং ২০১৫ সালের বন্যার সময় হয়েছিল।

দামোদর উপত্যকার বন্যা কি স্বাভাবিক বন্যা না ‘ ম্যান মেড ’ ?

  পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আঙিনায় ২০০০ সালের মহাপ্লাবনের পর থেকে একটি কথা বহুল চর্চিত যে, পশ্চিমের জেলাগুলির বন্যা স্বাভাবিক নয়, ম্যানমেড’। এবছরও একই কথার পূনরাবৃত্তি হচ্ছে। এখন সময় এসেছে পর্যালোচনা করার যে সত্যিই এই বন্যা  ম্যান- মেড’ না স্বাভাবিক ? ডি.ভি.সি - বছরের তথ্য এখনও উপলব্ধ না হওয়ার কারনে আমরা ২০১৫ সালের তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো - সত্যিই কি বন্যাম্যান মেড’ ? ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে কোমেন নামক সাইক্লোনের আগমনে অতিবৃষ্টি ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয় এবং দক্ষিনবঙ্গের ১৩ টি জেলার ২২২টি ব্লকের প্রায় .০৬ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।১৫ই জুলাই কোমেন পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়ে। উক্ত সাইক্লোনটি স্থলভাগে আসার পর অতি গভীর নিম্ন চাপের আকার ধারন করে এক সপ্তাহের বেশী সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে প্রবল বর্ষণ ঘটায়। অন্তিম পর্যায়ে কোমেন ঝাড়খন্ডের উপর সক্রিয় হবার ফলে উচ্চ দামোদর অববাহিকাতেও প্রবল বর্ষণ হয় এবং বাঁধগুলির উপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে ডি.ভি.সি আগষ্টের শুরুতে জল ছাড়তে বাধ্য হয় মূলত তিলাইয়া মাইধন বাঁধ থেকে দুটি বাঁধ ঝাড়খন্ড বাংলা সীমান্তে অবস্থিত, তাই এগুলি থেকে জল ছাড়লে পশ্চিমের জেলাগুলির উপর প্রভাব পড়তে বাধ্য।দুটি বাঁধ থেকে সম্মিলিতভাবে ৩রা আগষ্ট ৯৫,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়। ডি.ভি.সি কর্তৃপক্ষের মতে এই জল ছাড়া যুক্তিযুক্ত কারন, নিম্ন  অববাহিকার ধারন ক্ষমতা হল ,১০০০ কিউসেক। কিন্তু যে সময় জল ছাড়া হয় সে সময় (- আগষ্ট) নিম্ন  অববাহিকা প্রবল বর্ষণজনিত কারনে আগে থেকেই বন্যা কবলিত ছিল। উপরন্তু  উচ্চ জোয়ারের কারনে  জলের নিম্নমুখী প্রবাহ ছিল ধীর। এই অবস্থায় নিম্নপ্রবাহের ধারন ক্ষমতার ৮৬% জল ছাড়া কতটা যুক্তিসংগত তা আলোচনা সাপেক্ষ। ৫ই আগষ্ট দুপুর ১২ টায় মাইথনে জলস্তরের গভীরতা ছিল ১৪৮.৬৮ মিটার এবং পাঞ্চেতে ১২৮.২৮ মিটার যা জলাধারদ্বয়ের নিরাপদ সীমা যথাক্রমে ১৫০.৮৮ মিটার ১৩২.৫৯ মিটার থেকে বেশ কিছুটা কম তাহলে কি এই বিপর্যয় আটকানো যেত? সমালোচকদের মতে এই জল ছাড়ার অন্যতম কারন হল বিদ্যুৎ উৎপাদন কারন  মাইথন পাঞ্চেত হল ডি.ভি.সি- জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল কেন্দ্র।  ২০১৫ এর ৩১শে জুলাই থেকে ৩রা আগষ্ট পর্যন্ত এই দুই কেন্দ্রে .৮১ মিলিয়ন ইউনিট থেকে .৬৪ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, যা ৪৬% বৃদ্ধি! এই চার দিন জলস্তরের সীমা অপরিবর্তিত থাকে অর্থাৎ প্রায় একই হারে জল ছাড়া হতে থাকে যা স্বাভাবিক অবস্থাপেক্ষা প্রায় ৪০% বেশী অথচ সময় নিম্ন  অববাহিকা আগে থেকেই প্লাবিত ছিল। অপরপক্ষে ডি.ভি.সি কর্তৃপক্ষের মতে জলাধারদ্বয় থেকে জল ছাড়া হয়েছে Damodar Valley Reservoir Regulation Committee, Central Water Commission-র অনুমতি অনুসারে। প্রসঙ্গত: উল্লেখযোগ্য, Damodar Valley Reservoir Regulation Committee-র সদস্যদের অন্যতম হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ দপ্তরের প্রধান বাস্তুকার (Engineer)। সুতরাং,বন্যার অব্যবহিত পর রাজ্য সরকার জল ছাড়ার আগাম খবর না জানার জন্য ডি.ভি.সি কর্তৃপক্ষের উপর যে দোষারোপ করে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রকৃতপক্ষে জলাধারগুলি থেকে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেত্তয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ দপ্তরের যথেষ্ট ভূমিকা আছে এবং তা যদি অস্বীকার করা হয় তাহলে জানতে হবে সেচ দপ্তরের আমলাদের সাথে রাজ্য সরকারের সমন্বয়ের অভাব আছে। সুতরাং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলিতে বন্যার মূল কারন ডি.ভি.সি–র ছাড়া জল তা যেমন সত্য, রাজ্য সরকারও তার দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না। এটি অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই যে ডি.ভি.সি প্রকল্পের সর্বাধিক সুবিধাভোগী রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ, বর্ধমান জেলাকে ‘বাংলার শষ্য গোলা’য় পরিনত করার ক্ষেত্রে সেচ খালগুলির প্রভূত ভূমিকা আছে। শুধু তাই নয় হুগলি, হাওড়া জেলার রবি চাষের শ্রীবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সেচ খালগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। দামোদরের নিম্নখাতের সংস্কারের (পলি নিষ্কাষণ, বাঁধ মেরামত ইত্যাদি) দায়িত্ব রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তরের। সে দায়িত্ব যথাযত পালিত হচ্ছে কিনা তা অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত। উপরন্তু বালি মাফিয়ারা যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে নদীবক্ষ থেকে বালি চুরি করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথকে ব্যাহত করছে তা রাজ্য  প্রশাসনকেই প্রতিহত করতে হবে।

     পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়, তা হল বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন বন্যাকেই আর প্রাকৃতিক বলা যায় না। একথা ঠিক যে, বন্যার প্রধান কারন হল অতিবৃষ্টি ও নদীর ধারন ক্ষমতা অতিক্রান্ত হওয়া, যাকে কেবলমাত্র দূর্যোগ বলা যায়। এই দূর্যোগ বিপর্যয়ে পরিনত হবে কিনা তা নির্ভর করে সম্পূর্নরূপে মানবিক কার্যকলাপের উপর। অর্থ্যাৎ অতিবৃষ্টি বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি করে কিন্তু মানুষের কার্যকলাপ তার ভয়াবহতাকে বৃদ্ধি করে। তাই আজকাল বন্যাকে মনুষ্য-প্রকৃতিক (Quasi Natural) বা আধা-প্রাকৃতিক বির্পযয় বলা হয়। সুতরাং কোন বন্যাই যেমন সম্পূর্ন প্রকৃতিক হতে পারেনা তেমনি তথাকথিত ‘ম্যান-মেড’ ও হতে পারেনা। তাহলে উপায় কি?

   বন্যা পরবর্তীতে সরকারের দায়িত্ব যেন কেবলমাত্র ত্রানসামগ্রী বন্টনে সীমাবদ্ধ না থাকে।বন্যার পর ত্রান বিলি ও পুনর্বাসন যেমন আপদকালীন ভিত্তিতে করা উচিত, তেমনি দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা গ্রহনের মাধ্যমে নিম্ন দামোদর উপত্যকার বন্যার সমাধান খোঁজা উচিত। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খন্ড সরকার, অঞ্চলিক আবহাওয়া দপ্তর, ডি.ভি.সি কর্তৃপক্ষ ও Central Water Commission-র মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডি.ভি.সি কর্তৃপক্ষের উচিত জল ছাড়ার প্রকৃত তথ্য ও তার কারন দৈনন্দিন ভিত্তিতে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাতে করে অবিশ্বাসের বাতাবরন দূর হয়। অবশ্যই Micro Water Shade Management –র মাধ্যমে ধারন অববহিকাতে (উৎসমুখ) চেক ড্যাম নির্মাণ করা উচিত যেখানে বাঁধগুলির উচ্চতা ও আয়তন ভূমিভাগের ঢাল অনুযায়ী  নীচের দিকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। যার দ্বারা বন্যার সময় জলের নিম্নপ্রবাহকে আরও বেশী সময় বিলম্বিত করা যাবে ও ত্রান-উদ্ধারকার্যে অধিক সময় পাওয়া যাবে। রাজ্য সরকারের উচিত সুনিদিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে নিম্ন দামোদর অববাহিকায় নদী বাঁধগুলির পর্যবেক্ষন, মেরামতি ও নদীগর্ভ থেকে পলি নিষ্কাষণ করা। অবিলম্বে দলমত নির্বিশেষে বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে নদী তার স্বাভাবিক ঢাল অনুযায়ী প্রবাহিত হতে পারে। অবশেষে যে কথাটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হল আমাদের সচেতন হতে হবে যেন আমরা নদী থেকে নিরাপদ দূরত্বে বসতি স্থাপন করি, অবিবেচকের মতো কাজ করে নদীর স্বাভাবিক বাঁধ, প্রবাহ ও তার বাস্তুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত না করি। 

লকডাউনে মদ্যপান! তারপর? একটু ভাবুন ….

দিল্লীতে লকডাউন চলাকালীন সুরা প্রেমীদের তান্ডাব                photo courtesy: twitter     লকডাউন ঘোষণার প্রায় দেড় মাস পর সরকার সিদ্ধ...